উপন্যাস,,আজাদী সৈনিক,, মল্লিক আহমদ সরওয়ার (পার্ট ৫)
আজাদী সৈনিক,
মল্লিক আহমদ সরওয়ার
পার্ট ৫
আব্দুল লতীফের কণ্ঠ শুনতে পেল। আব্দুল লতীফ বলছে, এনায়েত! চারটা বেজে গেল, কমান্ডার যে এখনও আসছে না? মুজাহিদরা একথা শুনেই নেপথ্য থেকে হুংকার দিয়ে উঠল, 'গাদ্দার! আত্মসমার্পন কর। তোদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। আমরা তোদের মৃত্যু দূত।'
ওরা দু'জন আত্মসমর্পণ না করে তাদেরকে লক্ষ করে গুলি করতে থাকে। মুজাহিদরা বাধ্য হয়ে ওদের ওপর পাল্টা আঘাত করে। এর মধ্যে এনায়েতের একটি গুলি মুসার মাথায় আঘাত হানে। মুসা চক্কর খেয়ে নীচে পরে যায়। তার মাথা থেকে প্রবল বেগে রক্ত ঝরতে থাকে। তার অবস্থা দেখে মুজাহিদরা আরও উত্তেজিত হয় । ব্রাশ ফায়ারে মুনাফেকদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়। ওদের শরীর তল্লাশি করে মারকাজের ফটোসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া যায় । মুসা গুলির আঘাত পেয়ে পাথড়ের উপর পড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা আশংকাজনক হয়ে দাঁড়ায়। তাকে গাড়িতে তুলে মারকাজে নিয়ে আসে বাকি মুজাহিদরা। কমান্ডার ফারুক মুসাকে আহত দেখে অত্যন্ত দুঃখিত হন। মুজাহিদদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তোমরা চারজনেও একটি কিশোরকে হেফাযত করতে পারলে না? তোমরা কি বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলে? তোমরা কি জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলে? তোমরা দেখলে ওর মাথায় গুলি লেগেছে, ক্ষত থেকে অবিরাম রক্ত ঝরছে। ওকে হাসপাতালে না নিয়ে এখানে নিয়ে এসেছো কোন জ্ঞানে?
আমরা আপনাকে অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে মুসা সহ তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসেছি। লজ্জিত ভাবে মুজাহিদরা জওয়াব দিল ।
এখনই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমি অন্য গাড়ীতে আসছি। ডাক্তারকে বলবে, যে কোন মূল্যে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে? প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুজাহিদরা মুসাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে। ডাক্তাররা মুসাকে দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন। তার অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবুও তাকে কোন মূল্যে বাঁচিয়ে তুলতেই হবে। ডাক্তাররা তার শরীরে এক পাউন্ড রক্ত পুষ করে বিলম্ব না করে তাকে পেশোয়ায়ের বড় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
কমান্ডার যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন তখন মুসার অপারেশন শেষ হয়েছে কেবল । কমান্ডার অত্যন্ত চিন্তিত। তিনি মুসা ও তার নিজের জীবনের কথা ভাবছেন। মুসার জন্যই সে এখনো জীবিত I মুসার ত্যাগ অতুলনীয়। কিশোর মুসা যদি ব্যাপারটা লক্ষ না করত তাহলে হয়ত এখন সে থাকত পরপারের যাত্রী। তাছাড়া আমাদের অনেক গোপন বিষয় দুশমনরা জেনে যেত। তারা জেনে ফেলত আমাদের গোপন পরিকল্পনা। দু'হাত তুলে অন্তর দিয়ে মুসার জন্য দুআ করলেন । হে খোদা! তুমি আমাদেরকে ছেলেটির জীবন ভিক্ষা দান কর। তার মধ্যে লুকিয়ে আছে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, তুমি তাকে হেফাযত করো।
ভাল, আশা করা যায় কাল নাগাদ হুঁশ ফিরে পাবে।
কমান্ডার মারকাজে ফিরে এসে মুজাহিদদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি মুসার ঘরে খবর দিয়েছো? তারা আমতা আমতা করে জবাব দিলো, আমরা তো তার বস্তির ঠিকানা জানি না। একথা শুনে কমান্ডার তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য আফসুস করেন। কমান্ডার ফারুক মারকাজের সমস্ত মুজাহিদকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, তাদের কেউ মুসাদের বস্তি চিনে কিনা ।
মুজাহিদরা বলল, মুসার খোঁজে তাদের বস্তি থেকে এক বৃদ্ধ এসেছিলেন। তাঁর নাম খান বাবা ।
কমান্ডার সাহেব তখনই খান বাবাকে নিয়ে আসতে গাড়ি পাঠান। খান বাবা এলে কমান্ডার তার কাছে মুসার সব কথা খুলে বললেন। খান বাবা তাকে মুসার মায়ের দুঃশ্চিন্তার কথা জানান। কমান্ডার তৎক্ষণাত জীপে চড়ে মুসার মাকে শান্তনা দিতে ছুটে যান ।
তাঁবুর নিকটে এসে জীপটি থামে। খান বাবা ফাতিমার তাঁবুতে যেয়ে তাকে সব খুলে বলেন। সব কথা শুনে ফাতিমা তাকে বলে, 'কমান্ডারকে তাঁবুতে নিয়ে আসুন।'
খান বাবা কমান্ডার সাহেবকে ডেকে নিয়ে আসেন। কমান্ডার সাহেব ফাতিমাকে বলেন, ‘বোন! মুসা আহত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তবে আফগানবাসী তোমাদের মত মায়ের জন্য গৌরববোধ করে- যারা মুসার মত পুত্রের জন্ম দিয়েছে। সে নিজের জীবন বাজী রেখে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। সে দুশমনের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছে। আমি তোমাদের পেশোয়ার যাওয়া এবং ওখানে থাকার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সম্ভবতঃ মুসা পুরোপুরি ভাল হতে দু' এক মাস সময় লাগবে। এছাড়া তার সেবা শুশ্রূষার জন্য তুমি পাশে থাকলে ভাল হবে। বাইরে দাঁড়ান গাড়িটায় করে তোমাকে এখনই পেশোয়ার পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। তুমি দেরি করো না, এখনই তোমাকে পেশোয়ার যেতে হবে। তোমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত খান বাবা তোমাদের তাঁবু হেফাজত করবেন।
কমাণ্ডারের কথা শুনে ফাতিমা বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা মুসার শুশ্রুষার প্রতি অমলীন আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহ তুমি অতিদ্রুত মুসাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুল!
ফাতিমা তার সন্তানদের নিয়ে পেশোয়ার চলে আসে। প্রথম দিন মুসা, চোখ মেলে তার মাকে কাছে দেখে জিজ্ঞাসা করে, 'মা, আমি
কোথায়?
: "বাবা তুমি হাসপাতালে।
মুসার হুঁশ ফিরেছে দেখে ফাতিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মুসা জিজ্ঞাসা করে, মা, দুশমনদের গুপ্তচর কি মারা গেছে? কমান্ডার সাহেব বেঁচে আছেন?
'হ্যাঁ গুপ্তচরেরা মারা গেছে, কমান্ডার সাহেব সুস্থ আছেন । তিনিই তোমাকে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেছেন ।
মুসার হুঁশ ফিরে আসায় ফাতিমা আল্লাহর কাছে শুকুর আদায়
করে।
রাত দু'টায় ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে মুসাকে দীর্ঘ দু'মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। এর মধ্যে কমান্ডারকে সান্তনা দিয়ে বললেন, মুসার অবস্থা শকটাপন্ন বটে, কমান্ডার ফারুক শত ব্যস্ততার মধ্যেও কয়েকবার তাকে দেখতে তবে সে ভাল হয়ে উঠবে- ইনশাআল্লাহ। অপারেশন সাকসেস এসেছেন। তিনি যখনই আসতেন তখনই মুসাকে জিজ্ঞেস করতেন, হয়েছে। সবচেয়ে কঠিন সময়টা আমরা অতিক্রম করেছি। তবে এখনও কি তোমার জিহাদ করার শখ হয়?'
তার পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।
মুসা বলতো, এখন তো আগের চেয়েও বেশী ইচ্ছা হয়, কমান্ডার
দ্বিতীয় দিন কমান্ডার আবার হাসপাতালে যান। মুসা তখনও সাহেব! আমি দেশ ও মুজাহিদদের খেদমত করতে পেরেছি বলে। বেহুঁশ। ডাক্তার তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এখন অবস্থা অনেক আনন্দিত। এবার ভাল হয়ে জিহাদ করতে যাব। আর কারও মানা
শুনব না । আমাকে স্বদেশ-শত্রু জালিমদের অত্যাচারের বদলা নিতে হবে। আপনি আমার সাথে ওয়াদা করুন, আমাকে আপনার দলে নেবেন তো!' মুসা গভীর উৎসাহেরব সাথে একথাগুলো বলে । দুই মাস পর মুসা তাদের বস্তির তাঁবুতে ফিরে আসে। ডাক্তার তাকে ঘরে আরও একমাস পুরাপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। কমান্ডার সাহেব তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় সব খরচাপাতির ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে মুসার জন্য ফল ও দুধ কেনার জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকাও দেন। মুসা অতি কষ্টে এক মাস বসে বসে কাটায়। তার মন চাচ্ছিল, এ সময়টা সে মুজাহিদদের মারকাজে কাটাবে । মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের খরচের টাকাও শেষ হয়ে আসে ।
একদিন মুসা তার মাকে বলল : 'মা! আমি এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছি। আমাকে একটা কুঠার ও এক গোছা রশি এনে দাও । আমি কাল থেকে কাঠ কাটতে যাব।'
আমরা আপনাকে অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে মুসা সহ তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসেছি। লজ্জিত ভাবে মুজাহিদরা জওয়াব দিল ।
এখনই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমি অন্য গাড়ীতে আসছি। ডাক্তারকে বলবে, যে কোন মূল্যে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে? প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুজাহিদরা মুসাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে। ডাক্তাররা মুসাকে দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন। তার অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবুও তাকে কোন মূল্যে বাঁচিয়ে তুলতেই হবে। ডাক্তাররা তার শরীরে এক পাউন্ড রক্ত পুষ করে বিলম্ব না করে তাকে পেশোয়ায়ের বড় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
কমান্ডার যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন তখন মুসার অপারেশন শেষ হয়েছে কেবল । কমান্ডার অত্যন্ত চিন্তিত। তিনি মুসা ও তার নিজের জীবনের কথা ভাবছেন। মুসার জন্যই সে এখনো জীবিত I মুসার ত্যাগ অতুলনীয়। কিশোর মুসা যদি ব্যাপারটা লক্ষ না করত তাহলে হয়ত এখন সে থাকত পরপারের যাত্রী। তাছাড়া আমাদের অনেক গোপন বিষয় দুশমনরা জেনে যেত। তারা জেনে ফেলত আমাদের গোপন পরিকল্পনা। দু'হাত তুলে অন্তর দিয়ে মুসার জন্য দুআ করলেন । হে খোদা! তুমি আমাদেরকে ছেলেটির জীবন ভিক্ষা দান কর। তার মধ্যে লুকিয়ে আছে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, তুমি তাকে হেফাযত করো।
ভাল, আশা করা যায় কাল নাগাদ হুঁশ ফিরে পাবে।
কমান্ডার মারকাজে ফিরে এসে মুজাহিদদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি মুসার ঘরে খবর দিয়েছো? তারা আমতা আমতা করে জবাব দিলো, আমরা তো তার বস্তির ঠিকানা জানি না। একথা শুনে কমান্ডার তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য আফসুস করেন। কমান্ডার ফারুক মারকাজের সমস্ত মুজাহিদকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, তাদের কেউ মুসাদের বস্তি চিনে কিনা ।
মুজাহিদরা বলল, মুসার খোঁজে তাদের বস্তি থেকে এক বৃদ্ধ এসেছিলেন। তাঁর নাম খান বাবা ।
কমান্ডার সাহেব তখনই খান বাবাকে নিয়ে আসতে গাড়ি পাঠান। খান বাবা এলে কমান্ডার তার কাছে মুসার সব কথা খুলে বললেন। খান বাবা তাকে মুসার মায়ের দুঃশ্চিন্তার কথা জানান। কমান্ডার তৎক্ষণাত জীপে চড়ে মুসার মাকে শান্তনা দিতে ছুটে যান ।
তাঁবুর নিকটে এসে জীপটি থামে। খান বাবা ফাতিমার তাঁবুতে যেয়ে তাকে সব খুলে বলেন। সব কথা শুনে ফাতিমা তাকে বলে, 'কমান্ডারকে তাঁবুতে নিয়ে আসুন।'
খান বাবা কমান্ডার সাহেবকে ডেকে নিয়ে আসেন। কমান্ডার সাহেব ফাতিমাকে বলেন, ‘বোন! মুসা আহত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তবে আফগানবাসী তোমাদের মত মায়ের জন্য গৌরববোধ করে- যারা মুসার মত পুত্রের জন্ম দিয়েছে। সে নিজের জীবন বাজী রেখে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। সে দুশমনের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছে। আমি তোমাদের পেশোয়ার যাওয়া এবং ওখানে থাকার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সম্ভবতঃ মুসা পুরোপুরি ভাল হতে দু' এক মাস সময় লাগবে। এছাড়া তার সেবা শুশ্রূষার জন্য তুমি পাশে থাকলে ভাল হবে। বাইরে দাঁড়ান গাড়িটায় করে তোমাকে এখনই পেশোয়ার পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। তুমি দেরি করো না, এখনই তোমাকে পেশোয়ার যেতে হবে। তোমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত খান বাবা তোমাদের তাঁবু হেফাজত করবেন।
কমাণ্ডারের কথা শুনে ফাতিমা বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা মুসার শুশ্রুষার প্রতি অমলীন আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহ তুমি অতিদ্রুত মুসাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুল!
ফাতিমা তার সন্তানদের নিয়ে পেশোয়ার চলে আসে। প্রথম দিন মুসা, চোখ মেলে তার মাকে কাছে দেখে জিজ্ঞাসা করে, 'মা, আমি
কোথায়?
: "বাবা তুমি হাসপাতালে।
মুসার হুঁশ ফিরেছে দেখে ফাতিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মুসা জিজ্ঞাসা করে, মা, দুশমনদের গুপ্তচর কি মারা গেছে? কমান্ডার সাহেব বেঁচে আছেন?
'হ্যাঁ গুপ্তচরেরা মারা গেছে, কমান্ডার সাহেব সুস্থ আছেন । তিনিই তোমাকে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেছেন ।
মুসার হুঁশ ফিরে আসায় ফাতিমা আল্লাহর কাছে শুকুর আদায়
করে।
রাত দু'টায় ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে মুসাকে দীর্ঘ দু'মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। এর মধ্যে কমান্ডারকে সান্তনা দিয়ে বললেন, মুসার অবস্থা শকটাপন্ন বটে, কমান্ডার ফারুক শত ব্যস্ততার মধ্যেও কয়েকবার তাকে দেখতে তবে সে ভাল হয়ে উঠবে- ইনশাআল্লাহ। অপারেশন সাকসেস এসেছেন। তিনি যখনই আসতেন তখনই মুসাকে জিজ্ঞেস করতেন, হয়েছে। সবচেয়ে কঠিন সময়টা আমরা অতিক্রম করেছি। তবে এখনও কি তোমার জিহাদ করার শখ হয়?'
তার পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।
মুসা বলতো, এখন তো আগের চেয়েও বেশী ইচ্ছা হয়, কমান্ডার
দ্বিতীয় দিন কমান্ডার আবার হাসপাতালে যান। মুসা তখনও সাহেব! আমি দেশ ও মুজাহিদদের খেদমত করতে পেরেছি বলে। বেহুঁশ। ডাক্তার তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এখন অবস্থা অনেক আনন্দিত। এবার ভাল হয়ে জিহাদ করতে যাব। আর কারও মানা
শুনব না । আমাকে স্বদেশ-শত্রু জালিমদের অত্যাচারের বদলা নিতে হবে। আপনি আমার সাথে ওয়াদা করুন, আমাকে আপনার দলে নেবেন তো!' মুসা গভীর উৎসাহেরব সাথে একথাগুলো বলে । দুই মাস পর মুসা তাদের বস্তির তাঁবুতে ফিরে আসে। ডাক্তার তাকে ঘরে আরও একমাস পুরাপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। কমান্ডার সাহেব তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় সব খরচাপাতির ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে মুসার জন্য ফল ও দুধ কেনার জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকাও দেন। মুসা অতি কষ্টে এক মাস বসে বসে কাটায়। তার মন চাচ্ছিল, এ সময়টা সে মুজাহিদদের মারকাজে কাটাবে । মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের খরচের টাকাও শেষ হয়ে আসে ।
একদিন মুসা তার মাকে বলল : 'মা! আমি এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছি। আমাকে একটা কুঠার ও এক গোছা রশি এনে দাও । আমি কাল থেকে কাঠ কাটতে যাব।'
এনে দেব বেটা। এখনও ঘরে কয়েক দিনের খাবার আছে । তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরাম করো।' মা ও ছেলে তাদের সংসারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করছিল। এমন সময় তাঁবুর বাইরে মুজাহিদদের একটি জীপ এসে দাঁড়ায়। একজন মুজাহিদ জীপ থেকে নেমে মুসাকে ডাকে। মুসা বেরিয়ে এলে মুজাহিদ বলল, মুসা! কমান্ডার সাহেব তোমাকে মারকাজে ডেকেছেন। তিনি তোমাদের জন্য রিলিফ কার্ড পাঠিয়েছেন এবং এখনকার মত কিছু খরচাপাতি দিয়েছেন। তোমাকে তিনি তোমার মায়ের কাছে বলে আসতে বলেছেন। কোন বিশেষ কাজে তোমাকে কোথাও পাঠানো হবে । হতে পারে কয়েক মাস বা বছরেও তোমার ফেরা হবে না। একথা শুনে মুসার খুশী তার প্রাণে ধরে না। সে মায়ের কাছে রিলিফ কার্ড দিয়ে বলল, মা, যি যাচ্ছি। সংসারের ব্যয় নির্বাহের চাদে যাওয়ার অনুমতি দাও। চিন্তা দূর হল। এখন আমাে বুঝি, আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার কষ্ট হবে। কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য আমারও তো কিছু করণীয় আছে। আমার জন্য দু'আ কর। কমান্ডার সাহেব আমাকে কোন বিশেষ কাজের জন্য ডেকেছেন। হতে পারে ফিরে আসতে কয়েক মাস বা বছর লেগে যাবে । আমাকে তোমার থেকে দীর্ঘ দিন দূরে থাকার অনুমতি দাও। আমাকে খুশী মনে বিদায় দাও!
আমি তোমাকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। আমি গর্বিত, আমার স্বামী শাহাদাত বরণ করেছেন এবং মুজাহিদ কমান্ডার ছিলেন। আর আমার চেলে এখন তাঁরই স্থলাভিষিক্ত এক মর্দে মুজাহিদ- যারা লড়ছে স্বদেশভূমি ও ইসলামের স্বার্থে।
বাবা শুন, ‘তুমি এখনও অনেক ছোট। সব কাজ ভেবেচিন্তে পরামর্শের মাধ্যমে করবে, কখনও কমাণ্ডারের আদেশ অমান্য করো না। বিপদে ধর্যের সাথে আল্লাহকে ডাকবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না এবং কখনও কারো কাছে জীবন ভিক্ষা চাইবে না ।'
কথাগুলো বলতে বলতে ফাতিমার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠে। সে মুসাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। মুসা তাকে শান্তনা দিয়ে বলে, মা! কেঁদো না, তুমি জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ায় আমার মনে এখন অনেক আনন্দ । তুমি কেঁদে আমার আনন্দ নষ্ট করে দিও না। তুমি কাঁদলে আমার অত্যন্ত খারাপ লাগবে। আর আমি তো কোন খারাপ কাজে যাচ্ছি না!
না বেটা, এতো দুঃখের বা ব্যাথার কান্না নয়; এ হচ্ছে খুশী ও শুকরিয়ার কান্না। আমি এই আনন্দে কাঁদছি, আল্লাহ আমাকে তাঁর দেওয়া সন্তানকে আজ তাঁর দ্বীনের পথে জিহাদে পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছেন! ফাতিমা চোখের পানি আঁচলে মুছে জবাব দেয়।
খান বাবা ও অন্য মুরব্বীরা দু'আ করে মুসাকে বিদায় জানায়। জীপে বসার পর মুসা এক নজর তাঁবুর দিকে তাকিয়ে ফের আকাশের দিকে মুখ তুলে বলল : 'হে আসমান জমিনের মালিক! আমি ছোট, কমজোর, অবুঝ, আমাকে জ্ঞান ও শক্তি দাও, যেন আমি এই তাঁবুবাসীদের স্বদেশ-শত্রু আগ্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারি। এরা সবাই যেন তাদের স্বদেশেভূমি-মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে। এদের ভেঙ্গে ফেলা মসজিদগুলো যেন পুণরায় গড়তে পারি। আফগানিস্তানের বুকে তোমার দ্বীন সমুন্নত রাখো চিরদিন!
মুজাহিদদের এই মারকাজটির অবস্থান তিন দিকে পাহাড় ঘেরা একটি ছোট্ট উপত্যকায়। শুধু এক দিক থেকে এর মধ্যে প্রবেশ করার পথ। পাহাড়ের চূড়াগুলো বহু উঁচু এবং তার উপর দাঁড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা চেলগুজার গাছ। সুদৃশ্য বড় বড় এই গাছগুলোর কারণে কারণে মারকাজটি যে কাউকে চমৎকৃত করে। এ মারকাজের পরিখাগুলোও আকাশ থেকে দেখা যায় না। এরই এক পাশে রীতিমত ট্রেনিং চলে। আর তাদের নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে বহু নিরাপদ আশ্রয়। কোথাও কোথাও গাছের ঝোপের মধ্যে তাঁবু টানানো আছে। পাহাড়ের চূঁড়ায় ষোলটা বিমান বিধ্বংসী কামান তাক করা থাকে শত্রুর বিমানের অপেক্ষায়। দুশমনের বোমারু বিমান এখানে হামলা চালিয়েছে বহুবার। এ পর্যন্ত চারটি বিমান তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যার বিভিন্ন অংশ কুড়িয়ে মুজাহিদরা মারকাজের পাশে স্তুপ করে রেখেছে। দু'জন পাইলটও তাদের হাতে ধরা পড়েছে। শত্রুরা এই গুরুত্বপূর্ণ মারকাজের উপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। গর্ত পাহাড়ের কোন কোন স্থানে বোমার আঘাতে বড় বড় আছে। কোথাও কোথাও নাপাম বোমা বিস্ফোরণে গাছপালা জ্বলে ভষ্ম হয়ে গেছে।
মুসা যখন মারকাজে পৌঁছে তখন বড় একটি পরিখার মধ্যে ফিল্ড কমান্ডারদের মিটিং হচ্ছিল। মিটিংয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন পূর্বে যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কমান্ডার ফারুক বলছিলেন, করাচী ও লাহোরে বোমা বিস্ফোরণের কারণ হচ্ছে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া। হয়ত রাশিয়ার কে,জি,বি ও আফগান গুপ্তচর সংস্থা খাদ সম্মেলিতভাবে এই বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এই বিস্ফোরণের মূল উদ্দেশ্য হল, আফগান মুহাজিরদের প্রতি পাকিস্তানীদের মনে কুধারণা ও বিতশ্রদ্ধার সৃষ্টি করা। প্রথমে এরা হাতুরা গ্রুপ ও মাদক দ্রব্য চোরাচালানী বলে মুহাজিরদের বদনাম করার অপচেষ্টা করেছে ।
কমান্ডার ফারুকের কথা শেষ হলে একজন ফিল্ড কমান্ডার বললেন, হাতুরা গ্রুপের কাজ রাশিয়ার এজেন্টরা চালাচ্ছে, তারা ধরাও পড়েছে। আমরা নিজেরা কয়েকটি হিরোইনের আড্ডা ধ্বংস করে দিয়েছি। এইসব হিংসাত্মক ও ন্যাক্কারজনক কাজ করে ওরা,
আমি তোমাকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। আমি গর্বিত, আমার স্বামী শাহাদাত বরণ করেছেন এবং মুজাহিদ কমান্ডার ছিলেন। আর আমার চেলে এখন তাঁরই স্থলাভিষিক্ত এক মর্দে মুজাহিদ- যারা লড়ছে স্বদেশভূমি ও ইসলামের স্বার্থে।
বাবা শুন, ‘তুমি এখনও অনেক ছোট। সব কাজ ভেবেচিন্তে পরামর্শের মাধ্যমে করবে, কখনও কমাণ্ডারের আদেশ অমান্য করো না। বিপদে ধর্যের সাথে আল্লাহকে ডাকবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না এবং কখনও কারো কাছে জীবন ভিক্ষা চাইবে না ।'
কথাগুলো বলতে বলতে ফাতিমার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠে। সে মুসাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। মুসা তাকে শান্তনা দিয়ে বলে, মা! কেঁদো না, তুমি জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ায় আমার মনে এখন অনেক আনন্দ । তুমি কেঁদে আমার আনন্দ নষ্ট করে দিও না। তুমি কাঁদলে আমার অত্যন্ত খারাপ লাগবে। আর আমি তো কোন খারাপ কাজে যাচ্ছি না!
না বেটা, এতো দুঃখের বা ব্যাথার কান্না নয়; এ হচ্ছে খুশী ও শুকরিয়ার কান্না। আমি এই আনন্দে কাঁদছি, আল্লাহ আমাকে তাঁর দেওয়া সন্তানকে আজ তাঁর দ্বীনের পথে জিহাদে পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছেন! ফাতিমা চোখের পানি আঁচলে মুছে জবাব দেয়।
খান বাবা ও অন্য মুরব্বীরা দু'আ করে মুসাকে বিদায় জানায়। জীপে বসার পর মুসা এক নজর তাঁবুর দিকে তাকিয়ে ফের আকাশের দিকে মুখ তুলে বলল : 'হে আসমান জমিনের মালিক! আমি ছোট, কমজোর, অবুঝ, আমাকে জ্ঞান ও শক্তি দাও, যেন আমি এই তাঁবুবাসীদের স্বদেশ-শত্রু আগ্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারি। এরা সবাই যেন তাদের স্বদেশেভূমি-মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে। এদের ভেঙ্গে ফেলা মসজিদগুলো যেন পুণরায় গড়তে পারি। আফগানিস্তানের বুকে তোমার দ্বীন সমুন্নত রাখো চিরদিন!
মুজাহিদদের এই মারকাজটির অবস্থান তিন দিকে পাহাড় ঘেরা একটি ছোট্ট উপত্যকায়। শুধু এক দিক থেকে এর মধ্যে প্রবেশ করার পথ। পাহাড়ের চূড়াগুলো বহু উঁচু এবং তার উপর দাঁড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা চেলগুজার গাছ। সুদৃশ্য বড় বড় এই গাছগুলোর কারণে কারণে মারকাজটি যে কাউকে চমৎকৃত করে। এ মারকাজের পরিখাগুলোও আকাশ থেকে দেখা যায় না। এরই এক পাশে রীতিমত ট্রেনিং চলে। আর তাদের নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে বহু নিরাপদ আশ্রয়। কোথাও কোথাও গাছের ঝোপের মধ্যে তাঁবু টানানো আছে। পাহাড়ের চূঁড়ায় ষোলটা বিমান বিধ্বংসী কামান তাক করা থাকে শত্রুর বিমানের অপেক্ষায়। দুশমনের বোমারু বিমান এখানে হামলা চালিয়েছে বহুবার। এ পর্যন্ত চারটি বিমান তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যার বিভিন্ন অংশ কুড়িয়ে মুজাহিদরা মারকাজের পাশে স্তুপ করে রেখেছে। দু'জন পাইলটও তাদের হাতে ধরা পড়েছে। শত্রুরা এই গুরুত্বপূর্ণ মারকাজের উপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। গর্ত পাহাড়ের কোন কোন স্থানে বোমার আঘাতে বড় বড় আছে। কোথাও কোথাও নাপাম বোমা বিস্ফোরণে গাছপালা জ্বলে ভষ্ম হয়ে গেছে।
মুসা যখন মারকাজে পৌঁছে তখন বড় একটি পরিখার মধ্যে ফিল্ড কমান্ডারদের মিটিং হচ্ছিল। মিটিংয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন পূর্বে যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কমান্ডার ফারুক বলছিলেন, করাচী ও লাহোরে বোমা বিস্ফোরণের কারণ হচ্ছে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া। হয়ত রাশিয়ার কে,জি,বি ও আফগান গুপ্তচর সংস্থা খাদ সম্মেলিতভাবে এই বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এই বিস্ফোরণের মূল উদ্দেশ্য হল, আফগান মুহাজিরদের প্রতি পাকিস্তানীদের মনে কুধারণা ও বিতশ্রদ্ধার সৃষ্টি করা। প্রথমে এরা হাতুরা গ্রুপ ও মাদক দ্রব্য চোরাচালানী বলে মুহাজিরদের বদনাম করার অপচেষ্টা করেছে ।
কমান্ডার ফারুকের কথা শেষ হলে একজন ফিল্ড কমান্ডার বললেন, হাতুরা গ্রুপের কাজ রাশিয়ার এজেন্টরা চালাচ্ছে, তারা ধরাও পড়েছে। আমরা নিজেরা কয়েকটি হিরোইনের আড্ডা ধ্বংস করে দিয়েছি। এইসব হিংসাত্মক ও ন্যাক্কারজনক কাজ করে ওরা,
.png)
কোন মন্তব্য নেই