উপন্যাস,, প্রেমপাপী,, এনায়েতুল্লাহ আলতামাস, (পার্ট ৩)
প্রেম পাপী
এনায়েতুল্লাহ আলতামাস ।
(পার্ট ৩)
তাকে বলেছে, পীর তাকে ওরাতে দু তিনবার ডেকেছিলো।পীর ঘোষণা করে দিয়েছিলো, চিল্লা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন সাক্ষাৎ প্রার্থী কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তার কাছে আসতে পারবে না। দিনের বেলা তার শাগরেদ দু'জন কেবল ভিতরে আসতে পারবো। রাতে ওদেরও ভেতরে যাওয়ার অনুমতি ছিলো না।
এভাবে চলতে লাগলো, পীর ও দুই শাগরেদকে প্রতি রাতে খাবার দেওয়া হতে লাগলো। প্রতিদিন তিন কেটলি দুধ, ঘিয়ে ডুবিয়ে পরাটা ভাজা এবং আস্ত একটা মুরগি পীরকে খাওয়ানো হতো। ঐ বাড়ির সামনে বহু সাক্ষাৎপ্রার্থী প্রতিদিন ভিড় করতো। পীরের সাক্ষতের জন্য আদালত ও পীরের শাগরেদদের কাছে মিনতি করতো। শিশু বাচ্চা নিয়ে অনেক মহিলাও বাড়ির বাইরে সারাদিন কাটিয়ে দিতো। কিন্তু পীরের বরকতের দৃষ্টি কারো ভাগ্যে জুটতো না।
পুরো আটটি রাত সে চিল্লা করলো। আদালত জানালো সত্য কথা বলতে কি আমিও খুব উৎফুল্ল ছিলাম, আমার বাড়ি থেকে গুপ্তধন উদ্ধার করা হচ্ছে। চিল্লা শেষ করে পীর আমাকে বললো, সে গুপ্তধনে হাত দিতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ, শাহ সুলাইমানের এক জিন গুপ্তধন পাহারা দিচ্ছে।
আদালত তখন পীরের হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করলো যেভাবেই হোক, তাকে এই খাযানা বের করে দিতেই হবে। সে তাকে হাত ভরে নাজরানা দেবে। যে করেই হোক জিন এখান থেকে হটিয়ে দিন ।
জিন আমাকে সাবধান করে দিয়েছে খাযানার কাছে না যেতে। পীর আদালতকে বলে, আমি তাকে রাজি করতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাকে রাজী করা এত সোজা নয়। আমি তাকে অন্ধ করতে পারি, শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু এতে আমাদের প্রাণের আশংকা রয়েছে। একথা বলে দু'দুবার বললো আমি অবশ্যই পারবো, পারতেই হবে আমাকে। যা হোক আদালত ও তার স্ত্রী তাজ পীরকে খাযানা উদ্ধারের ব্যাপারে রাজী করালো পাঁচশ টাকার বিনিময়ে। তখনকার পাঁচশ এখনকার বিশ হাজার টাকার চেয়ে বেশি। সঙ্গে ছিলো দুটি ঘোড়া, আরো দামী দামী কাপড় ও সোনার জরি দিয়ে তৈরী নাগরা জুতো।
পীর জানালো, আরো কয়েক রাত চিল্লা করতে হবে। আদালত থেকে সে আরো শ খানেক টাকা নিয়ে তার দুই শাগরেদকে দিয়ে শহরে পাঠালো। তারা প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনবে। তারা তখন রওয়ানা হয়ে গেলো এবং সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলো। আদালত জানলোও না তারা কি নিয়ে এসেছে।
পীর আদালতকে নির্দেশ দিলো, সন্ধ্যায় তার স্ত্রীকে গোসল করিয়ে লালপাড়ের কাপড় পরিয়ে তার কামরায় পাঠিয়ে দেবে। তবে সবসময় তাকে উযু অবস্থায় থাকতে হবে। এই মহিলা আমার কাছ থেকে সাত কদম দূরে বসে থাকবে। আর তার মনে শুধু আল্লাহর নামই থাকবে।
আদালত বড় আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে তার স্ত্রীকে পীরের কামরায় পাঠিয়ে দিলো। পীর তাকে সঙ্গে নিয়ে তিন রাত চিল্লা করলো। সকালের সুর্যোদয়ের আগেই তাজ তার কামরা থেকে বের হয়ে যেতো।
চতুর্থ দিন পীর কোদাল চাইলো। আদালত ঘটনা বর্ণনার সময় জানালো। ভেতর থেকে কোদাল চালানোর আওয়াজ আসতে,
পুরো আটটি রাত সে চিল্লা করলো। আদালত জানালো সত্য কথা বলতে কি আমিও খুব উৎফুল্ল ছিলাম, আমার বাড়ি থেকে গুপ্তধন উদ্ধার করা হচ্ছে। চিল্লা শেষ করে পীর আমাকে বললো, সে গুপ্তধনে হাত দিতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ, শাহ সুলাইমানের এক জিন গুপ্তধন পাহারা দিচ্ছে।
আদালত তখন পীরের হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করলো যেভাবেই হোক, তাকে এই খাযানা বের করে দিতেই হবে। সে তাকে হাত ভরে নাজরানা দেবে। যে করেই হোক জিন এখান থেকে হটিয়ে দিন ।
জিন আমাকে সাবধান করে দিয়েছে খাযানার কাছে না যেতে। পীর আদালতকে বলে, আমি তাকে রাজি করতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাকে রাজী করা এত সোজা নয়। আমি তাকে অন্ধ করতে পারি, শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু এতে আমাদের প্রাণের আশংকা রয়েছে। একথা বলে দু'দুবার বললো আমি অবশ্যই পারবো, পারতেই হবে আমাকে। যা হোক আদালত ও তার স্ত্রী তাজ পীরকে খাযানা উদ্ধারের ব্যাপারে রাজী করালো পাঁচশ টাকার বিনিময়ে। তখনকার পাঁচশ এখনকার বিশ হাজার টাকার চেয়ে বেশি। সঙ্গে ছিলো দুটি ঘোড়া, আরো দামী দামী কাপড় ও সোনার জরি দিয়ে তৈরী নাগরা জুতো।
পীর জানালো, আরো কয়েক রাত চিল্লা করতে হবে। আদালত থেকে সে আরো শ খানেক টাকা নিয়ে তার দুই শাগরেদকে দিয়ে শহরে পাঠালো। তারা প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনবে। তারা তখন রওয়ানা হয়ে গেলো এবং সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলো। আদালত জানলোও না তারা কি নিয়ে এসেছে।
পীর আদালতকে নির্দেশ দিলো, সন্ধ্যায় তার স্ত্রীকে গোসল করিয়ে লালপাড়ের কাপড় পরিয়ে তার কামরায় পাঠিয়ে দেবে। তবে সবসময় তাকে উযু অবস্থায় থাকতে হবে। এই মহিলা আমার কাছ থেকে সাত কদম দূরে বসে থাকবে। আর তার মনে শুধু আল্লাহর নামই থাকবে।
আদালত বড় আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে তার স্ত্রীকে পীরের কামরায় পাঠিয়ে দিলো। পীর তাকে সঙ্গে নিয়ে তিন রাত চিল্লা করলো। সকালের সুর্যোদয়ের আগেই তাজ তার কামরা থেকে বের হয়ে যেতো।
চতুর্থ দিন পীর কোদাল চাইলো। আদালত ঘটনা বর্ণনার সময় জানালো। ভেতর থেকে কোদাল চালানোর আওয়াজ আসতে,
লাগলো। তারপর এই আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। প্রায় এক
পর দরজা খুললো। ঘরের সবাইকে সে কামরায় ডেকে আনলো। এক জায়গায় মাটি খোদাই করা দেখা গেলো। আদালতকে বললো, এখানে আরো কোদাল চালাও। আদালত তিনবার কোনার মারলো। চতুর্থবার এমন আওয়াজ যেন কোন ধাতব কিছুর ওপর কোদাল পড়েছে ।
“থামো : পীর বললো তখন- এখন মাটি সরাও ?
আদালত হাতে মাটি সরালে ইস্পাতের চকচকে কিছু দেখতে পেলো। আদালত হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো বিস্ময়ে এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো- "ইয়া সরকার। এতো কোন বাক্সের তালা মনে হচ্ছে?
ভালো করে দেখো- পীর বললো
আদালত আরো মাটি সরালো।
এটা একটা ঢাকনা । পীর বললো, একটা ভোগের ওপর রাখা আছে। এটা সবাই ভালো করে দেখো
আদালতের মা বোন স্ত্রী সবাই ঝুঁকে দেখলো। ভোগের ঢাকনা মাটির খাজে আটকে আছে। পীর কোদাল নিয়ে তার ওপর আস্তে আস্তে টোকা দিলো, শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছিলো এর নিচে কিছু একটা আছে। এখন আর এর চেয়ে বেশি খনন করতে পারবে না পীর বললো আগামীকাল রাতে গ্রামের সবাই যখন শুয়ে পড়বে তখন তোমরা খনন শুরু করবে। আজ রাতে ঐ ঘরে প্রদী জ্বালিয়ে রাখো। আজ রাতে আমি এখানে থাকবো না। কাছে . সুলাইমানের দরবারে আমাকে হাজিরা দিতে হবে। তোমরা আমাকে দিয়ে একটি পাপ করিয়েছো। খাযানার যে জিন প্রহরা ছিলো তাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এখন আমার হলো, শাহে সুলাইমানের দরবারে গিয়ে মাফ চাওয়া। না হলে সবার অপঘাতে মৃত্যুর আশংকা রয়েছে।
শাহে সুলাইমানের দরবার কতদূর হুজুর! আদালত জিজে করলো।
এ ভেদ তুমি সহ্য করতে পারবে না। পীর চোখ বড় বড় করে। বললো, আমি যা দেখতে পাই তুমি তো তা দেখতে পাবে না। এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আগামীকাল সন্ধ্যার তোমাদের কাছে চলে আসবো। এমনভাবে কথা বলছিলো যেন স্বপ্নের ঘোরে কথা বলছে। সে বলতে লাগলো, এই খাযানা তোমরা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। তোমাদের খাযানার দরকার ছিলো আমি তা বের করে দিয়েছি। এখন তা কো করে ভোগ করো।
পীর চলে গেলো, আদালত তখনই সে ঘরে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলো । সে দিনটি এবং রাতটিও কেটে গেলো । পরদিনও চলে গেলো। পীর ফিরে এলো না। তার দুই শাগরেদ, পীরের সঙ্গেই চলে গিয়েছিলো
সে দিন সন্ধ্যাতেই আদালতের ক্যাপ্টেন ভাই ছুটিতে বাড়িতে আসলো । বাড়ি এক হলেও ক্যাপ্টেনের হিসসা প্রাচীর দিয়ে পৃথক করা। আদালত খবর পেয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, এর আগেই ক্যাপ্টেনের স্ত্রী ক্যাপ্টেনকে পীরের কাহিনী যতটুই জানে বলে দিয়েছিলো। ক্যাপ্টেন আদালতকে দেখে পীর সম্পর্ক। জিজ্ঞেস করলো । আদালত পীরের কারামতের কিছু কাহিনী গুলি বললো, পীর তো তার ঘরে গুপ্ত ধনের মুখ খুলে দিয়ে গেছে। রাতে গুপ্তধন বের করা হবে।
পর দরজা খুললো। ঘরের সবাইকে সে কামরায় ডেকে আনলো। এক জায়গায় মাটি খোদাই করা দেখা গেলো। আদালতকে বললো, এখানে আরো কোদাল চালাও। আদালত তিনবার কোনার মারলো। চতুর্থবার এমন আওয়াজ যেন কোন ধাতব কিছুর ওপর কোদাল পড়েছে ।
“থামো : পীর বললো তখন- এখন মাটি সরাও ?
আদালত হাতে মাটি সরালে ইস্পাতের চকচকে কিছু দেখতে পেলো। আদালত হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো বিস্ময়ে এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো- "ইয়া সরকার। এতো কোন বাক্সের তালা মনে হচ্ছে?
ভালো করে দেখো- পীর বললো
আদালত আরো মাটি সরালো।
এটা একটা ঢাকনা । পীর বললো, একটা ভোগের ওপর রাখা আছে। এটা সবাই ভালো করে দেখো
আদালতের মা বোন স্ত্রী সবাই ঝুঁকে দেখলো। ভোগের ঢাকনা মাটির খাজে আটকে আছে। পীর কোদাল নিয়ে তার ওপর আস্তে আস্তে টোকা দিলো, শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছিলো এর নিচে কিছু একটা আছে। এখন আর এর চেয়ে বেশি খনন করতে পারবে না পীর বললো আগামীকাল রাতে গ্রামের সবাই যখন শুয়ে পড়বে তখন তোমরা খনন শুরু করবে। আজ রাতে ঐ ঘরে প্রদী জ্বালিয়ে রাখো। আজ রাতে আমি এখানে থাকবো না। কাছে . সুলাইমানের দরবারে আমাকে হাজিরা দিতে হবে। তোমরা আমাকে দিয়ে একটি পাপ করিয়েছো। খাযানার যে জিন প্রহরা ছিলো তাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এখন আমার হলো, শাহে সুলাইমানের দরবারে গিয়ে মাফ চাওয়া। না হলে সবার অপঘাতে মৃত্যুর আশংকা রয়েছে।
শাহে সুলাইমানের দরবার কতদূর হুজুর! আদালত জিজে করলো।
এ ভেদ তুমি সহ্য করতে পারবে না। পীর চোখ বড় বড় করে। বললো, আমি যা দেখতে পাই তুমি তো তা দেখতে পাবে না। এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো। আগামীকাল সন্ধ্যার তোমাদের কাছে চলে আসবো। এমনভাবে কথা বলছিলো যেন স্বপ্নের ঘোরে কথা বলছে। সে বলতে লাগলো, এই খাযানা তোমরা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। তোমাদের খাযানার দরকার ছিলো আমি তা বের করে দিয়েছি। এখন তা কো করে ভোগ করো।
পীর চলে গেলো, আদালত তখনই সে ঘরে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলো । সে দিনটি এবং রাতটিও কেটে গেলো । পরদিনও চলে গেলো। পীর ফিরে এলো না। তার দুই শাগরেদ, পীরের সঙ্গেই চলে গিয়েছিলো
সে দিন সন্ধ্যাতেই আদালতের ক্যাপ্টেন ভাই ছুটিতে বাড়িতে আসলো । বাড়ি এক হলেও ক্যাপ্টেনের হিসসা প্রাচীর দিয়ে পৃথক করা। আদালত খবর পেয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, এর আগেই ক্যাপ্টেনের স্ত্রী ক্যাপ্টেনকে পীরের কাহিনী যতটুই জানে বলে দিয়েছিলো। ক্যাপ্টেন আদালতকে দেখে পীর সম্পর্ক। জিজ্ঞেস করলো । আদালত পীরের কারামতের কিছু কাহিনী গুলি বললো, পীর তো তার ঘরে গুপ্ত ধনের মুখ খুলে দিয়ে গেছে। রাতে গুপ্তধন বের করা হবে।
রাতে ক্যাপ্টেনও আদালতের ঘরে গেলো। আদালত তাকে খাযানার ঘরে নিয়ে গেলো। ক্যাপ্টেন আদালতকে খনন কাজ শুরু করতে বললো। আদালত মাটি থেকে ঢাকনা উঠিয়ে নিলো। কিন্তু নিচে কিছুই ছিলো না । আদালত পাগলের মতো কোদাল চালাতে লাগলো। কিন্তু কাদা মাটি ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। ক্যাপ্টেন বুঝে ফেললো, তার ছোট ভাই প্রতারণার শিকার হয়েছে। ঢাকনাটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে সবাইকে বললো, এতো এ যুগের বানানো ঢাকনা ।
ঘরের একদিকে রাখা বড় একটি ডেগচি দেখিয়ে বললো, এই ঢাকনা তো ঐ ডেগচির।
আদালতের বোন ও স্ত্রী থালাটা চিনতে পারলো। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। পারস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না তাদের।
আমার মাথায় একটা সম্ভবনা উদয় হলো, আদালতের গ্রামে পীরের কোন গুপ্ত লোক আছে। আরেকটা ক্ষীণ সন্দেহ জাগলো আদালতের ঘরেই হয়তো সহমর্মী কেউ আছে। কিন্তু এ সন্দেহটা পোষণ করতে মনে সায় দিচ্ছিলো না, কারণ এ পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছে । তার চাকর বাকর হয়তো পীরকে জানাতে সাহায্য করেছে।
ক্যাপ্টেন সাহেব! আদালতের বড় ভাইকে বললাম- আসামী মনে হচ্ছে অত্যন্ত ভয়ংকর। একে তাড়াতাড়ি ধরতে না পারলে এ এলাকায় প্রতারণাসহ আরো অনেক বিপদজনক আপরাধকর্ম সংঘটিত হতে পারে। শুধু আপনার ভাই-ই নয় পুরো এলাকার প্রতি আমি সহমর্মী। আমার দায়িত্ব আদায় করার জন্য আপনার ভাইয়ের পরিবারেরকেউও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়বে। এরা সবাই আমার মা বোনের মতোই। এটা আমার পেশা ও আত্মমর্যাদাবোধের প্রশ্ন। আপনি সেনা অফিসার। পেশাগত দায়িত্ব কি জিনিস আপনি সেটা জানেন ।
জনাব : আপনার জন্য সম্পূর্ণ অনুমতি আছে। ক্যাপ্টেন বললো শুধু অনুরোধ করবো, জিজ্ঞাসাবাদ আমার ঘরে বা আমার ভাইয়ের ঘরে করবেন, আরেকটা অনুরোধ করার আছে- খেতে হবে কিন্তু আমার ঘরে।
ঘরের চাকর নওকরদের আমার কাছে সোপর্দ করুন।
দুই নওকরকে পাঠানো হলো আমার কাছে। রাতে কোথায় ঘুমোয় ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম। একজন বললো নিজের বাড়িতে ঘুমোয়। আরেকজন এ বাড়ির উঠোনের মাথায় ছোট একটি কুঠুরীতে মোয়। যে রাতে পীর পালিয়েছে সে রাতেও সে ওখানেই শুয়েছিলো।
নওকরকে নিয়ে আমি তার থাকার জায়গাটি দেখতে গেলাম । গরু মহিষের ঘরের কাছে একটি নিম গাছ, সেই গাছ তলায় তার ঘর। তার থাকার জায়গা থেকে বাড়ির প্রধান দরজা আট কদম দূরে। সে প্রতিদিন ফজরের আযানের আওয়াজ শুনে জেগে উঠে এবং গরুগুলোকে দানা পানি দেয়। প্রধান দরজা রাতে ভেতর থেকে বন্ধ থাকে । সকাল বেলা সেই দরজা খুলে দেয়।
প্রধান দরজাটি বেশ প্রশস্ত ও অনেক উঁচু। বড় মোটা শেকল দিয়ে লাগানো হয় । ক্যাপ্টেন জানালো, সকাল বেলা উঠে দেখে ঐ জানালা এবং দরজার শেকল খোলা। ভালো করে মনে করে দেখো, নওকরকে বললাম আজ সকালে কি দরজা তুমি খুলেছিলে না কি জেগে উঠে দেখেছো দরজা খোলা?
আমার ভালো করেই মনে আছে হুজুর! শিকল আমি নিজ হাতে খুলেছি। এ বাড়িতে একজন পীর এসেছিলো সেটা কি জানো
তুমি?
জানি হুজুর! অনেক দিন ছিলেন এখানে। কাল তাকে এখানে ধরে এনেছিলো। তাতে অনেক হৈ চৈ হয়েছে গ্রামে। ক্যাপ্টেন সাহেব ও তার ভাই আরো অনেকে তাকে অনেক মেরেছে। আজ সকালে গরুগুলোকে দানপানি দিচ্ছিলাম। তখন চৌধুরী সাব (আদালত) এ দিকে এলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কাল রাতে আমি কোথায় ছিলাম। আমি বললাম এখানেই। আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না আমাকে। তবে কয়েকটি গাল দিয়ে চলে গেলেন। এরপর কাপ্তান সাবও এলেন। আমি তাকে চললাম, দরজার শিকল তো লাগানো ছিলো। হুজুর! আমরা গরীব আদমী! গালি খাওয়াই আমাদের ভাগ্য। আমি তাকে আর কিছু বললাম না । তিনি চলে গেলেন ।
নওকরকে ওখানেই রেখে বাইরে এসে ক্যাপ্টেন ও আদালতকে একদিকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সকালে উঠে বড় দরজার দিকে গিয়ে কি দরজা খোলা দেখেছে তারা! না কি নওকরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে, সে দরজার শিকল খোলা পেয়েছে না বন্ধ পেয়েছো?
এক ভাই আরেক ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালো। তারা হয়রান হয়ে বলল শিকল লাগানো ছিলো, নওকর কি আপনাদেরকে এ কথা বলেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম। হ্যাঁ জনাব! আদালত বললো ।
আচ্ছা আপনাদের নওকর কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
ষোলআনা জনাব : কেন সে কি কিছু করেছে? আদালত পেরেশান হয়ে গেলো।
এটা সময়মতো জানা যাবে। সে কিছু করে থাকলেও সেটা জরুরী কিছু হবে না। আমি শুধু বলতে চাই আসামী ঐ জানালা পথে বের হয়নি। সে তো পেছনের উঠোনেই যায়নি। জনাব ! সকালে তো আমরা জানালা খোলা দেখেছি। সব সময় তো সেটা বন্ধই থাকতো, আদালত বললো ।
এ ছাড়া তো অন্য কোন পথও ছিল না। ইনস্পেক্টর সাহেব! ক্যাপ্টেন বললো, বড় দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিলো। আর বাইরের দরজা ভিতর থেকে ছিলো বন্ধ। সে জানালা দিয়েই পালিয়েছে ।
আসামীর শারীরিক আকৃতি আপনাদের দু'জনের মধ্যে কার সঙ্গে মিলে? আমার সঙ্গে। সে আমার চেয়ে একটু বেশি মোটাও হবে । কম হবে না, আদালত বললো।
দু'জনকে জানালাওয়ালা কামরায় নিয়ে গেলাম।" দেখালাম, জানালার ফ্রেম জুড়ে ঝোল কালি লেগে আছে। তারপর আদালতকে বললাম, জানালা দিয়ে সে যেন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আদালত মাথাটুকুই কেবল ঢোকাতে পারলো। কাধ জানালার ফাঁকে ফেসে গেলো। সে কাধ ওপর নিচ করলো। বহুকষ্টে কাধ বেরও হয়ে গেলো, কিন্তু শরীর? কেটে বের করতে হবে। আদালতকে নেমে আসতে বললাম। সে বহু কসরত করে জানালা থেকে নেমে এলো।
জানালার আশে পাশের ঝোল ময়লা দেখিয়ে বললাম, দেখুন তো ময়লাগুলো আছে কি? আপনার জামা দেখুন। আসামী এদিক দিয়ে গেলে ঝোল ময়লা সব পরিস্কার হয়ে যেতো। আপনার,
.png)
কোন মন্তব্য নেই